আল্লামা শফী কেন আজগর আলী হাসপাতালে?

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য নামীদামী হাসপাতাল থাকার পরও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীকে কেন পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে? নিরাপত্তাজনিত কোনো কারণে, নাকি এর পেছনে অন্য আর কোনো কারণ আছে- এমন জল্পনা-কল্পনা এখন সর্বত্র।
নানা জল্পনা-কল্পনা ও অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে  এই প্রতিবেদক সরেজমিনে যান পুরান ঢাকার ধূপখোলার আজগর আলী হাসপাতালে। সেখানে হেফাজতের আমিরের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
হাসপাতালের প্রধান গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ২০/২৫ জন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী বসে আছেন, সাথে আল্লামা শফীর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। আর হেফাজতের আমির আল্লামা শফী রয়েছেন হাসপাতালটির চার তলার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।
হাসপাতালটির আইসিইউ’র সামনে গিয়েও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য বা বাড়তি কোনো নিরাপত্তা চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর একান্ত সচিব মাওলানা শফিউল আলম বলেন, ‘হুজুরকে যখন ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত হয়, তখনই আমরা চট্টগ্রাম সিআরপি হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে কথা বলি এবং সব হাসপাতাল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিই। সবাই আমাদের বলে এই আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে আসতে। আমরা ঢাকায় অনেক ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, তারাও বলেছেন- এই হাসপাতালে নিয়ে আসতে। সবাই বলেছে নতুন এই হাসপাতালটি অন্যান্য সব হাসপাতাল থেকে ভালো। এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে হুজুরের নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো বিষয় নেই। তাকে তো নিরাপত্তা দিচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাহ যাদি তাকে হেফাজত করেন তাহলে কেউ কি তার ক্ষতি করতে পারবে? আপনাদের দোয়ায় তিনি এখন ভালো আছেন।’
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ বিন শফী বলেন, ‘এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কোনো ধরণের যোগাযোগ করেনি। আমরাই খোঁজ-খবর নিয়ে বাবাকে এখানে ভর্তি করেছি। বাবাকে ঢাকায় আনার আগে আমি আমার ঢাকা মেডিকেলের এক ডাক্তার বন্ধুর সাথে কথা বলি। সে আমাকে বলে এই হাসপাতালটি বর্তমানে সবচেয়ে আধুনিক। এখানকার সব যন্ত্রপাতি নতুন ও আধুনিক। তার পরামর্শ অনুযায়ী বাবাকে আমরা এখানে ভর্তি করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আসলেই এই হাসপাতালের সবকিছু অনেক ভালো। সবাই অনেক আন্তরিক। ডাক্তাররা অনেক ভালো। এই হাসপাতালের সবাই বাবাকে অনেক দেখাশোনা করছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ১৮ তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছে সিটি গ্রুপ। এখানে দেশের স্বনামধন্য ডাক্তাররা কর্মরত রয়েছেন। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি সেগুলো সবই অত্যন্ত আধুনিক।
আজগর আলী হাসপাতালের পাশে ১৪ একর জমিতে আরো একটি ৭৫০ বেডের হাসপাতাল করবে সিটি গ্রুপ। শুধু হাসপাতালই নয়, সেখানে থাকবে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি নার্সিং কলেজও। আর এজন্য সিটি গ্রুপ আগামী ৫ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করবে।
আজগর আলী হাসপাতালকে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক হাসপাতাল বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটির সিনিয়র ম্যানেজার ড. ইকবাল হুসাইন হাওলাদার বলেন, ‘মোটামুটি আধুনিক না, আমরা সম্পূর্ণ আধুনিকই বলবো। কারণ অন্যান্য করপোরেট হাসপাতালগুলোতে যে সুযোগ সুবিধা আছে তার চেয়ে আমাদের এখানে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সেগুলো ১০-১১ বছরের পুরনো, আর আমরা মাত্র নতুন। আমাদের হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি আছে সবই আধুনিক। আর এখানে যে ডাক্তারা যোগদান করেছেন ওই সব হাসপাতাল থেকেই বড় বড় ডাক্তাররা এখানে এসেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে ক্যান্সার সেন্টার বাদে চিকিৎসার সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা আমরা এখন পর্যন্ত করতে পেরেছি।’

0 comments:

Post a Comment