কলার খোসা |
কলার খোসা সাধারণত আমরা ফেলে দিই, কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ফেলে দেওয়া কলার খোসায় রয়েছে চুল ও ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান? কলার খোসায় রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন A, B, C, এবং E, যা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহারের চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যত্ন নেওয়া সবসময়েই ভালো। তাই, আজ আমরা জানব কীভাবে কলার খোসা ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন ঝকঝকে ত্বক এবং মসৃণ, সুন্দর চুল।
কেন কলার খোসা উপকারী?
কলার খোসায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ, যা ত্বকের দাগ-ছোপ, বলিরেখা এবং চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলার খোসা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল করে তোলে। চুলের জন্য এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে, যা চুলকে নরম এবং মসৃণ করে তোলে।
ত্বকের জন্য কলার খোসা ব্যবহারের উপায়
১. ত্বকের উজ্জ্বলতা আনতে কলার খোসার ফেস প্যাক
কলার খোসার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতা আনে।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ১ চামচ বেসন
- ১ চামচ মধু
পদ্ধতি:
- কলার খোসা ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে বেসন এবং মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এই ফেস প্যাক ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং ত্বককে ঝকঝকে ও উজ্জ্বল করে তোলে।
২. বলিরেখা কমাতে কলার খোসা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা এবং ফাইন লাইন দেখা দিতে শুরু করে। কলার খোসার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ ত্বকের বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ১ চামচ দই
পদ্ধতি:
- কলার খোসা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে দই মিশিয়ে নিন।
- প্যাকটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এই প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা কমবে এবং ত্বক টানটান হবে।
৩. ব্রণ দূর করতে কলার খোসা
ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে কলার খোসা একটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ১ চিমটি হলুদ
পদ্ধতি:
- কলার খোসা ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে সামান্য হলুদ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
- এই প্যাকটি ব্রণের উপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এটি ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
চুলের জন্য কলার খোসা ব্যবহারের উপায়
১. চুল নরম ও মসৃণ করতে কলার খোসার হেয়ার প্যাক
কলার খোসা চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে তোলে।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ২ চামচ মধু
- ১ চামচ অলিভ অয়েল
পদ্ধতি:
- কলার খোসা ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে মধু এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- প্যাকটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এটি চুলকে নরম করে এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে।
২. চুলের রুক্ষতা দূর করতে কলার খোসা
চুলের রুক্ষতা এবং ডগা ফাটা সমস্যার জন্য কলার খোসা খুবই কার্যকর।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ১ চামচ নারকেল তেল
- ১ চামচ দই
পদ্ধতি:
- সব উপাদান মিশিয়ে চুলের গোড়ায় এবং ডগায় ভালোভাবে লাগান।
- ৩০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে মসৃণ ও সুস্থ করে তোলে।
৩. খুশকি দূর করতে কলার খোসা
খুশকি দূর করতে কলার খোসা ব্যবহারে চমৎকার ফল পাওয়া যায়। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান মাথার ত্বকের সংক্রমণ কমায়।
যা যা লাগবে:
- ১টি কলার খোসা
- ১ চামচ নিমপাতার রস
পদ্ধতি:
- কলার খোসা ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে নিন।
- এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এটি খুশকি দূর করে এবং মাথার ত্বককে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
কলার খোসা ব্যবহারের কিছু বাড়তি টিপস
- কলার খোসা ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করলে তা আরও কার্যকর হবে।
- ত্বকে কলার খোসা ব্যবহারের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
- চুলে প্যাক ব্যবহারের পর একটি ভালো মানের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
কলার খোসার যেসব উপকারিতা রয়েছে, তা জানার পর আর কখনো ফেলে দেওয়ার কথা ভাববেন না। ত্বক এবং চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করলে আপনি সহজেই পেতে পারেন ঝকঝকে ত্বক এবং সুন্দর, মসৃণ চুল। প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি সাশ্রয়ীও বটে। তাই, এখনই কলার খোসা দিয়ে নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলুন।
0 comments:
Post a Comment