সেহরি ও ইফতারের ফজিলত

রোজা মানুষের আত্মার উন্নতি বিধানের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করে, তারা রমজান শেষে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো পূতঃপবিত্র হয়ে যায়।’ এ জন্য অনাদিকাল থেকে আল্লাহতায়ালার হুকুমে খোদাভীরুরা রোজা পালন করে আসছেন। দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহতায়ালাও উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ করেছেন, যাতে তারা রহমতের ছায়াতলে থেকে, আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পায়।
প্রতিদিন রোজাদারের রোজা শুরু হয় ভোররাতে সেহরির মাধ্যমে এবং দিনশেষে সূর্যাস্তের পর ইফতারের মাধ্যমে রোজার সমাপ্তি হয়। সেহরি ও ইফতার হচ্ছে রোজা শুরু ও শেষের দুটি প্রান্তসীমা। দুটি প্রান্তসীমাতেই খাওয়ার বিধান ও ফজিলত রয়েছে। রোজায় দীর্ঘ সময় খানাপিনা থেকে বিরত থাকতে হয় বলে শুরুতে খেয়ে নেওয়া এবং শেষে আবার খেতে বসার একটি মানবীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণেই সেহরি-ইফতারের ফজিলত ও আবেদন সীমাবদ্ধ নয়। সেহরি ও ইফতার খাওয়া স্বতন্ত্র একটি ইবাদতও বটে।
এটা পালন করার মাঝে বহু ফজিলত ও তাৎপর্য রয়েছে। এক ঢোক পানি কিংবা এক লোকমা খাদ্য দিয়ে হলেও সেহরি খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। রোজার নিয়তে সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেহরি খাও, তাতে বরকত আছে।’ সেহরি পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। সামান্য খেলেও সেহরির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া মোস্তাহাব। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, সময় যেন পার না হয়ে যায়। ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজায় সেহরির বিধান ছিল না।
ইসলামের প্রথম যুগেও সেহরি ছাড়াই রোজা রাখা হতো। পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) সেহেরি খাওয়ার বিধান নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি-খ্রিস্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।’ সেহরি সুবহে সাদিকের আগেই খেতে হয়। এরপর কিছু খেলে রোজা হবে না। অনেকে মনে করেন, ফজরের আজান পর্যন্ত সেহরির সময় থাকে।
এটা ঠিক নয়। কেউ যদি সেহরির সময় আছে মনে করে খেয়ে ফেলে, আর বাস্তবে সময় না থাকে তাহলে তাকে রোজা কাজা করতে হবে। অন্যদিকে ইফতার রোজাদারদের জন্য একটি আনন্দময় সময়। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মোস্তাহাব। হাদিসে ইফতার সম্পর্কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ কল্যাণের সঙ্গে থাকবে ততকাল, যতকাল তারা শিগগির ইফতার করবে’ (বোখারি শরীফ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘দ্বীন জয়ী থাকবে ততদিন, যতদিন লোক শিগগির ইফতার করবে। কেননা ইহুদি-খ্রিস্টানরা ইফতার করে দেরিতে’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজা)। ইফতার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে’ (তিরমিজি)।মূলত আগের যুগে যেসব সম্প্রদায়ের ওপর রোজা ফরজ ছিল তারা ইফতার করতে বিলম্ব করায় ইফতারের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতো।
শেষ নবীর উম্মত যেন সে বঞ্চনার শিকার না হয় বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে নবী (সা.) সেদিকেই সবাইকে সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে রোজার প্রস্তুতি ও সমাপ্তির খাবার দুটিতে অন্য রোজাদারদের শরিক করার পক্ষেও বহু ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সেহরির সময়ের মতো ইফতারের আগ মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে দোয়া কবুল হয়। দিনব্যাপী সংযম শেষে নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার করার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া রিজিক আস্বাদনের যে বান্দাসুলভ ব্যাকুলতার চিত্র ফুটে ওঠে, আল্লাহতায়ালার কাছে তা অত্যন্ত পছন্দনীয়।

0 comments:

Post a Comment