বয়স ধরে রাখতে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে
আমরা কত কি না করে থাকি। কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই আছে এক সমাধান, পালং
শাক। আর এতে আছে লুটেইন নামে একটি উপাদান, যা বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে অক্ষম
করে দেয়।
এতে লুটেইন নামক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা
নিলেও শরীর এই উপাদানটি তৈরি করতে অক্ষম। সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ারং ইন এজিং
নিউরোসায়েন্স নামক জার্নালে একটি গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, লুটেইন
যে শুধুমাত্র শরীর এবং ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে তা নয়। সেই সঙ্গে
কগনিটিভ এবিলিটি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
যেমন-
১. পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে
১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ৫৫৮ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম থাকে, যা দিনের চাহিদার প্রায় ১৬ শতাংশ পূরণ করে দেয়। প্রসঙ্গত,
পেশির গঠনের পাশাপাশি হাড়কে শক্তপোক্ত করতে পটাশিয়ামের কোনও বিকল্প হয়
না। সেই সঙ্গে কিডনি স্টোন এবং রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা
পালন করে থাকে।
২. ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
শরীর যাতে ঠিক মতো প্রোটিন গ্রহণ করতে
পারে সেদিকে খেয়াল রাখে পালং শাকে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম। শুধু তাই নয়,
নার্ভের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্লাড প্রেসার এবং ব্লাড স্যুগার
নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয় এই খনিজটি।
৩. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়
পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশের মহিলা
বাসিন্দাদের প্রায় সিংহভাগই অ্যানিমিয়ার মতো রোগের শিকার। আর এর পিছনে
মূল কারণ হল আয়রনের অভাব। তাই তো ভারতীয়দের, মানে আমাদের যত বেশি করে
সম্ভব পালং শাক খেতে হবে। কারণ পালং শাকে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় আয়রন,
দেহে এই বিশেষ খনিজটির অভাব পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. পালং শাক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো রোজের ডায়েটে
এই শাকটির অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! আসলে পাংল শাখে রয়েছে প্রচুর মাত্রায়
ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লুটেইন,
বিটা-ক্য়ারোটিন এবং জিয়া-এক্সেনথিন। এই সবকটি উপাদানই শরীরে উপস্থিত
টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি
ঘটিয়ে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. প্রোটিনের ঘাটতি মেটায়
১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ২ দশমিক ৯ গ্রাম
প্রোটিন থাকে, যা খুব সহজেই শরীরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। শুধু তাই নয়,
বাকি প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবারের তুলনায় পালং শাক সহজে হজমে হয়ে যায়। ফলে খুব
কম সময়ে প্রোটিন শরীরের কাজে লেগে যাওয়ার সুযোগ পায়।
৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে চোখের
ক্ষমতা কমতে শুরু করে। এই ধরনের সমস্যাকে চিকিৎসকেরা ম্যাকিউলার ডিজঅর্ডার
নামে ডেকে থাকেন। এমনটা আপনার সঙ্গেও হোক, তা কি চান? তাহলে পালং শাকের
সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলুন। বেঁচে যাবেন। কারণ কি জানেন? এই শাকটির শরীরে
প্রচুর মাত্রায় রয়েছে জিয়া-এক্সেথিন নামক একটি শক্তিশালী
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে
থাকে। আর লুটেইন, রেটিনার যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে।
৭. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
হার্টকে সুস্থ রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি
অ্যাসিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি রয়েছে পালং শাকে। তাই
তো যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাক বা কোনও ধরনের হার্টের রোগের ইতিহাস
রয়েছে তারা নিয়মিত পালং শাক খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজে লাগে
পালং শাকে ক্লোরোফিল নামে একটি উপাদান
থাকে, যা শরীরে উপস্থিত কার্সিনোজেনিক এলিমেন্টদের ধ্বংস করে। ফলে
ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে। এখানেই শেষ নয়, যেমনটা আগেও
আলোচনা করা হয়েছে যে এই শাকটিতে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ভিটামিন এ। এই
উপাদানটি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে বিশেষভাবে
সাহায্য করে থাকে।
0 comments:
Post a Comment