রেড মিট হিসেবে গরুর মাংস অনেক স্বাদের
এবং অনেকের কাছেই খুব প্রিয় একটি খাবার। বাংলাদেশের মানুষ মাংসের মধ্যে
গরুর মাংস খেতেই বেশি পছন্দ করেন। তবে বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ
চিহ্নিত হওয়ায় খাবারটি প্রিয় হলেও অনেকে এড়িয়েও চলেন। গরুর মাংস স্বাদে
অতুলনীয় এবং পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে যে কোনো
খাবারই সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হয়। আর সেই কারণে খাবারের পুষ্টিমূল্য
তার সঠিক রান্নার কৌশল, সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যের জন্য এর উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টি :
গরুর মাংস
প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রাণী থেকে সংগৃহীত হয় বলে এটি প্রাণিজ
প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গরুর মাংসে
বিদ্যমান।
প্রোটিন :
গরুর মাংস
থেকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি
থেকেও প্রোটিন চলে আসে। গরুর মাংসের প্রোটিন থেকে যে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া
যায়, তা হাড় ও মাংসপেশির কাজে অনেক সাহায্য করে থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে
২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
ফ্যাট :
গরুর মাংসে অনেক
সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। ফ্যাটের উপস্থিতির জন্য গরুর মাংস অনেক মজাদার হয়ে
থাকে। কচি মাংসে এই ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে
ফ্যাট রয়েছে ২.৬ গ্রাম।
মিনারেলস :
এক টুকরো
গরুর মাংসে অনেক ধরনের মিনারেল পাওয়া যায়। বিশেষ করে জিংক, আয়রন,
সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও কপার। এই
মিনারেলগুলো শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। জিংক আমাদের শরীরের কোষ
রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। বলা হয় তিন আউন্স পরিমাণ
গরুর মাংস দৈনিক জিংকের ৩৯% চাহিদা পূরণ করে থাকে।
ভিটামিন :
গরুর মাংসে
অনেক রকম ভিটামিন থাকে, বিশেষ করে বি১২ বি৬ রিবোফ্ল্যাবিন ও বি১২-এর
প্রয়োজনীয়তা অনেক, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর প্রয়োজনীয়তা অনেক।
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, দৈনিক ২.৪ মিলিগ্রাম বি১২ লাগে। তিন
আউন্স গরুর মাংস বি১২-এর দৈনিক ৩৭% চাহিদা পূরণ করতে পারে। তিন আউন্স গরুর
মাংস ফসফরাস, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন, জিংক ও সেলেনিয়ামের খুবই ভালো উৎস।
তিন আউন্স কচি গরুর মাংসে আয়রন, নায়াসিন, বি৬ ও রিবোফ্ল্যাভিন পাওয়া যায়।
গরুর মাংস ও স্বাস্থ্য:
গরুর মাংসে অনেক পুষ্টি থাকার পরেও
অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। গরুর মাংসের ক্যালরি ও
পুষ্টি উপাদানের তারতম্য নির্ভর করে রান্নার পদ্ধতির ওপর। এ ছাড়া গরুর কোন
অংশটি খাওয়া হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অতিরিক্ত গরুর মাংস
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—কারণ গরুর মাংসে থাকে কোলেস্টেরল, ফ্যাট ও
সোডিয়াম। কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যাদের রক্তে
কোলেস্টেরল বেশি, তাঁদের অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
গরুর মাংস থেকে অনেক প্রোটিন চলে আসে, তাই
যাঁদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাঁদের অবশ্যই গরুর মাংস এড়িয়ে যেতে হবে।
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদেরও গরুর মাংস এড়িয়ে চলা উচিত। এতে উপস্থিত
সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় বলে।
অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা অতিরিক্ত গরুর মাংস খান, তাঁদের ক্যানসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কীভাবে খাবেন :
কচি গরুর
মাংসের চর্বি ভালোভাবে পরিষ্কার করে, প্রয়োজনে একটু সেদ্ধ করে পানিটা ফেলে
রান্না করলে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর হয় না। এ ছাড়া গরুর মাংসের
কিমা বা ছোট করে কাটা মাংস ও স্টেক ইত্যাদি ভালো। তবে গরুর মাংস আপনার জন্য
কতটুকু ক্ষতিকর তা নির্ভর করে আপনি কতটুকু খাচ্ছেন তার ওপর। সপ্তাহে একবার
বা মাসে দুবার খাওয়া যেতে পারে। গরুর মাংস রান্নায় তেল কম ব্যবহার করবেন।
ঘি বা মাখন গরুর মাংস রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়। সবজি যেমন বাঁধাকপি,
ক্যাপসিকাম, কচি কাঁঠাল বা অন্যান্য সবজি দিয়ে গরুর মাংস রান্না করে খেলে
উপকার পাওয়া যায়।
যে কোনো খাবার অতিরিক্ত খেলেই তা
স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তাই পরিমিতভাবে সঠিক পদ্ধতিতে গরুর মাংস
খেলে নিজেকে অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে এবং এই স্বাদের খাবারটি
থেকে ভবিষ্যতে কাউকে বঞ্চিত হতে হবে।source:bdhealth
0 comments:
Post a Comment