লবণ কম খাওয়া কি সত্যিই নিরাপদ? চিকিৎসকদের পরামর্শ জেনে নিন

নুন 

খাবারে অতিরিক্ত নুন বা লবণ খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে আমরা সকলেই সচেতন। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং কিডনির সমস্যার সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের সম্পর্ক বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত। তাই স্বাস্থ্যসচেতন অনেকে খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেন। তবে জানেন কি, লবণ একেবারে কম খাওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?

চিকিৎসকরা বলছেন, যেমন অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই অপ্রয়োজনীয়ভাবে লবণ কম খাওয়াও শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আসুন, জেনে নিই লবণ কম খাওয়ার উপকারিতা, সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব, এবং কীভাবে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখবেন।

লবণ কেন প্রয়োজনীয়?

লবণের প্রধান উপাদান হলো সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড। এই দুটি উপাদান শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে।

শরীরে লবণের ভূমিকা:
  • জল-লবণ ভারসাম্য: শরীরে তরল পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা: স্নায়ুর সংকেত পৌঁছে দিতে লবণ সাহায্য করে।
  • পেশি সংকোচন: পেশি সংকোচন এবং শিথিল করার জন্য সোডিয়াম প্রয়োজন।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: লবণ শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লবণ কম খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্যসচেতনতার জন্য খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা ভালো।

১. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

লবণ কম খেলে রক্তচাপ কম থাকে, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

পরামর্শ:

যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাঁদের খাবারে লবণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

২. কিডনির সুরক্ষা

লবণ কম খেলে কিডনির ওপর চাপ কম পড়ে, যা কিডনি রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ

লবণ বেশি খেলে শরীরে পানি জমে ওজন বাড়তে পারে। লবণ কম খেলে পানি জমার ঝুঁকি কমে।

লবণ কম খাওয়ার সমস্যা

অপ্রয়োজনীয়ভাবে লবণ বেশি কমিয়ে ফেললে শরীরে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

১. সোডিয়ামের ঘাটতি (হাইপোনাট্রিমিয়া)

খাবারে অতিরিক্ত কম লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

লক্ষণসমূহ:
  • ক্লান্তি
  • মাথা ঘোরা
  • বমিভাব
  • রক্তচাপ অত্যধিক কমে যাওয়া
২. স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা

লবণের অভাবে স্নায়ুতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এর ফলে মনোযোগের ঘাটতি এবং স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা হতে পারে।

৩. ক্ষুধামান্দ্য

লবণের স্বাদ খাবারে অভাব পূরণ করে। লবণ একেবারে কম খেলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

৪. পেশি দুর্বলতা

পেশি সংকোচন এবং শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে লবণ অপরিহার্য। কম লবণ খেলে পেশি দুর্বল এবং খিঁচুনি হতে পারে।

কতটা লবণ খাওয়া উচিত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা এক চা-চামচ পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত।

সতর্কতা:
  • লবণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম হওয়া উচিত নয়।
  • যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে লবণের পরিমাণ ঠিক করতে হবে।
সঠিকভাবে লবণ গ্রহণের টিপস
  • প্রাকৃতিক লবণের ব্যবহার বাড়ান: রান্নায় প্রসেসড লবণ কমিয়ে প্রাকৃতিক লবণ ব্যবহার করুন।
  • প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন: প্রসেসড খাবারে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিন: খাবারে অতিরিক্ত লবণ যোগ না করে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করুন।
  • ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করুন: শুধু লবণ নয়, খাদ্যের সমস্ত উপাদানের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখুন।
খাবারে লবণ কমানো যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনই একেবারে কমিয়ে ফেলাও ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক পরিমাণে লবণ খাওয়া শরীরের জন্য অপরিহার্য। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লবণের মাত্রা নির্ধারণ করুন এবং সঠিক ডায়েট অনুসরণ করুন।

সঠিক পরিমাণে লবণ খান, সুস্থ জীবন যাপন করুন।

0 comments:

Post a Comment