![]() |
ট্রাম্প করবেন কাঁকড়ার ব্যবসা |
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখন কাঁকড়ার ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন।
লাইসেন্সটি ১১ মার্চ বিকেলে ইস্যু করা হয়। লাইসেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসার নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প এসোসিয়েশন’। প্রতিষ্ঠানের মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প এবং মা ম্যারি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প। এটাই বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা-মায়ের নামও। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, লাইসেন্সে মালিক হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি স্থান পেয়েছে।
লাইসেন্সে মালিকের সব ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের উল্লেখ থাকলেও, ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালিত হবে ঢাকার আফতাবনগরে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সঠিক ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।+
এটি সত্যিই চমকপ্রদ, তবে ঘটনা একদম বাস্তব! ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রাজস্ব বিভাগ ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে একটি ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন যে, এমন একটি লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার বিষয়টি অবাক করলেও সম্পূর্ণ বাস্তব। এ ঘটনার পর ডিএনসিসির ভেতরও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
আবেদনকারী নির্ধারিত সব ফি, যা মোট ২,২৬৫ টাকা, ডিএনসিসির অনুকূলে পরিশোধ করার পর লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়েছে। এই লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্সের মেয়াদকালে তিনি চাইলে এটি ব্যবসার জন্য বা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্সের আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারী দুটি গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দিয়েছেন। প্রথমটি একটি অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, এবং দ্বিতীয়টি একজন চীনা নাগরিকের বাংলাদেশের ভিসা। এসব নথি দিয়েই তিনি লাইসেন্সটি অর্জন করেছেন।
লাইসেন্সটি ডিএনসিসির অঞ্চল-১০, সাতারকুল এলাকা থেকে ইস্যু করা হয়েছে। ব্যবসার প্রকৃতি হিসেবে "অন্যান্য-একক" উল্লেখ করা হয়েছে, আর ব্যবসার ধরন হিসেবে কাঁকড়া মাছ বিক্রেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে: ডিএনসিসির আওতাধীন বাড্ডার আফতাবনগরের ২ নম্বর সেক্টরের এফ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৪০/৪২ নম্বর বাড়িতে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে আফতাবনগরে গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের (ঢাকা পূর্ব) পাশ ঘেঁষে চলে গেছে এফ ব্লকের ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটি। রাস্তাটি কিছুটা এগোলেই ৪ নম্বর সড়ক দেখা যায়। সড়কের শেষ প্রান্তে ট্রেড লাইসেন্সে উল্লেখিত ৪০/৪২ নম্বর বাড়িটি রয়েছে, যা ১০ তলা এবং নতুন।
বাড়ির নিচে বসে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক পরিচয় দেওয়া মোহাম্মদ নাহিদ। ট্রেড লাইসেন্সটি তাঁকে দেখানোর পর তিনি মুচকি হাসলেন এবং বললেন, "ভুয়া।"
মোহাম্মদ নাহিদ প্রথম আলোকে জানান, এই ভবনে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই। এটি একটি আবাসিক ভবন, যেখানে বিভিন্ন তলায় পরিবার নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা বসবাস করেন।
এছাড়া, লাইসেন্সের মালিকের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ১২৫তম সড়কের ৫৫ (পশ্চিম)।
ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনে অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র এবং একটি চীনা নাগরিকের ভিসার কপি সংযুক্ত করা হলেও, এটি এখন প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভাড়া নেওয়া হয়েছে তেজগাঁওয়ের মণিপুরিপাড়া এলাকার ১০৬/১৯ নম্বর বাড়ি, যেখানে ব্যবসার ধরন হিসেবে ঠিকাদারি উল্লেখ করা হয়েছে এবং মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা। চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এছাড়া, লাইসেন্সের আবেদনে একটি চীনা নাগরিক, কাংজুয়াং ডিংয়ের বাংলাদেশে অবস্থানের ভিসার কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর ভিসার মেয়াদ আগামী ২২ মে পর্যন্ত।
ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি ডিএনসিসির প্রশাসকের সভাপতিত্বে রাজস্ব বিভাগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ট্রেড লাইসেন্স সেবা আরও দ্রুত এবং সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আবেদনকারী প্রয়োজনীয় নথি ও টাকা জমা দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটেড) ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং আবেদনকারী নিজেই সেই লাইসেন্সটি প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, এই নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই ভুয়া লাইসেন্সের সংখ্যা বেড়ে গেছে, এবং ট্রাম্পের নামে নেওয়া ই-ট্রেড লাইসেন্সের মতো একাধিক ভুয়া লাইসেন্সও ইস্যু হচ্ছে।
এ ঘটনার পর, সেবা প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা এবং নথি যাচাইয়ের ব্যবস্থা পুনঃমূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, পূর্বের পদ্ধতিতে আবেদন জমা দেওয়ার পর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজাররা মাঠে গিয়ে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করতেন। যদি সবকিছু সঠিক থাকত, তবে আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে তথ্য যাচাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেড) পদ্ধতিতে চলে আসায় অনেকেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করছেন।
আগে লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা বা অধিদপ্তর থেকে অনুমতি কিংবা ছাড়পত্র নিতে হতো, কিন্তু এখন সেগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আবেদনের সঙ্গে কাগজপত্র জমা দিলেই ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে অনেক ই-ট্রেড লাইসেন্সে অসঙ্গতি এবং ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়ার ঘটনা ঘটছে, যা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে বেড়ে গেছে।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাদের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে বর্তমানে সিস্টেমের কিছু দুর্বলতা এবং গ্যাপের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লাইসেন্স ইস্যু করার পর থেকে ভুয়া কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া লাইসেন্সটিও সেই ধরনের ঘটনার একটি উদাহরণ, বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে, তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এই ঘটনা ঘটেছে পরীক্ষামূলকভাবে। তাঁর মতে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রাম্পের নামেও লাইসেন্স ইস্যু হতে পারে, তা কর্মীরা ট্রায়াল হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন।
মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, "আমাদের স্টাফরাই পরীক্ষামূলকভাবে এটি (ট্রাম্পের নামে লাইসেন্স) করেছেন। তারা এই প্রক্রিয়াটি ট্রায়াল করে দেখিয়েছেন যে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইলন মাস্কের নামেও লাইসেন্স তৈরি হচ্ছে। এই পরীক্ষা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে ভুয়া ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়া কীভাবে সম্ভব, তা বোঝানো।"
তিনি আরও জানান, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পদ্ধতিতে কিছু সংশোধন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির দুর্বলতা সমাধান করা যায়নি, যার কারণে এরকম সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment