ভারতের মেয়েরা কি ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে উদারতা অবলম্বন করে, নাকি বাংলাদেশের মেয়েদের মতো তারাও রক্ষণশীল?
অস্মিতা মান্না (Asmita Manna):
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না কারণ আমি কোন রকম (সাধারণীকরণ )জেনেরালিজেশন এর বিরুদ্ধে। যাই হোক, বিশেষ ভাবে অনুরোধ এসেছে তাই উত্তর দিচ্ছি।
প্রথমেই বলি বাংলাদেশের মেয়েরা কতটা রক্ষণশীল, সে সম্বন্ধে আমার একেবারেই ধারণা নেই। কারণ আমি যে সমস্ত বাংলাদেশী মেয়েদের দেখেছি ইন্ডিয়াতে পড়তে এসেছে, তাদের দেখে অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনে হয় নি।
দ্বিতীয়ত, প্রশ্নের সঙ্গে যে লিঙ্কটি দেওয়া হয়েছে, সেটার বোধগম্যতা বুঝতে পারলাম না। প্রশ্নকর্তার বক্তব্য কি এরকম যে একটি ছেলে একটি মেয়েকে বন্ধুত্ব/ ভালোবাসার প্রস্তাব দিলেই মেয়েটিকে হ্যাঁ বলতে হবে? আর না হলেই সে রক্ষণশীল? তাই যদি হয়, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত উন্নত দেশের মেয়েরাই রক্ষণশীল। এটা ভালো করে বুঝে নেওয়া উচিত যে ‘না’ বলার অধিকার সকলের রয়েছে। এবং অপরজন তাতে কষ্ট পেলে, সেটা তার সমস্যা, যে ‘না’ বলছে তার নয়। এবং ‘না’ মানে ‘না’।
তৃতীয়ত, ভারতের মেয়েদের প্রসঙ্গে আসি। আমি নিজে ভারতের মেয়ে। দ্বাদশ শ্রেনী অবধি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যে স্কুলে পড়াশুনা করেছি তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমার স্কুলের কাছের বন্ধুরা সবাই মেয়ে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে কোচিং এর সূত্রে ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব হলেও ২/৩ জনের বেশী ছেলে বন্ধুর সাথে এখন ফেসবুক ছাড়া যোগাযোগ নেই। এরপরে কলেজ জীবন সহশিক্ষার মাধ্যম ছিল। প্রথম কলেজে আমি হস্টেল নিবাসী ছিলাম, তাই সেখানেও সবথেকে প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের গ্রুপটা মেয়েদেরই গ্রুপ। কিন্তু এর বাইরেও কলেজ জীবন থেকে আমার প্রচুর ভালো বন্ধু আছে, যারা ছেলে এবং যাদের থেকে উভয় পক্ষের বিয়ের পরেও আমি রাত ৪টে তে ফোন ধরতে পারব এবং আমার বর ও তার বৌ কোন রকম সন্দেহ করবে না। মাস্টার্স এর কলেজ এ আমি ছিলাম ডে-স্কলার। এখানে আমাদের গ্রুপে ছিল ৯টি ছেলে এবং ২ টি মেয়ে। তাদের মধ্যেও ২/৩ জনের সঙ্গে এখনো প্রাণের যোগাযোগ আছে। হয়ত কারোর সাথেই গত এক বছরে সেরকম ভাবে কথা হয়নি, কিন্তু আমি জানি আমার বিপদে তারা সাধ্যমত ছুটে আসবে এবং তাদের বিপদে আমিও ছুটে যাব। এবং এরকম কিছু বন্ধু আমার বরের জীবনেও আছে। এর থেকে কি প্রমাণ হয় ভারতেরর মেয়েরা উদার?
চতুর্থত, বন্ধুত্ব হয় সমানে সমানে। অর্থাৎ তাদের মন-মানসিকতা সমান হতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব বেশি মানে রাখে না (আমার প্রিয় একটি বন্ধু আমার তুলনায় ৫ গুণ বেশি রোজগার করে, কিন্তু তাতে আমাদেরর কথা বলতে বা সমস্যা ভাগ করে নিতে অসুবিধা হয় না!)। কারোর প্রতি দয়া বা উদারতা দেখিয়ে বন্ধুত্ব হয় না। কারোর প্রতি সহানুভূতি থেকেও বন্ধুত্ব হয় না। কাউকে জোর করে বন্ধু বানানো যায় না এবং বন্ধুত্ব মানেই প্রেম নয়। কাজেই খাদিজা যা করেছে ঠিক করেছে। কিন্তু বদরুল যা করেছে সেটা অন্যায়।
এডিট ১ঃ
পঞ্চমতঃ আমি তৃতীয় পয়েন্টে শুধে নিজের এবং আমার আসেপাশের মেয়েদের কথাই বললাম। এর বাইরেও একটা বিশাল অংশ রয়েছে, যেখানে ছেলেরা এবং মেয়েরা উভয়েই বিপরীত লিঙ্গের কারোর সাথে বন্ধুত্ব করতে, বা বন্ধুত্বই বা বলি কেন, সাধারণ কথা বার্তা বলতেও অস্বস্তি বোধ করে। তবে ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা কমছে বলেই আমার বিশ্বাস। এর মুল কারণ সহশিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা; বা থাকলেও একই ক্লাসে ছেলে এবং মেয়দের কথা বলতে না দেওয়া, আলাদা বেঞ্চে না বসলে শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি।এর ফলে অন্য লিঙ্গের মানুষও যে স্বাভাবিক একটি প্রাণী, এই সহজ বিষয়টি কেউ মনে রাখতে পারে না। এবং এর ফলে অফিসে কাজ করতে এসেও তারা অস্বস্তি বোধ করে কি করে সহকর্মীর সাথে কথা বলবে। অথবা কোন মহিলা সহকর্মী চা খেতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে ভাবে সে ডেটে যেতে চাইছে।
যেটা মনে রাখতে হবেঃ
১। একবার বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু কেউ ‘না’ করলে তার মতামতকে সন্মান করুন, ‘না’ মানে ‘না’
২। বন্ধুত্ব মানেই প্রেম নয়; যদি একজনের মনে হয় তার দিক থেকে সম্পর্ক শুধুমাত্র বন্ধুত্বের নয়, প্রেমের দিকে ঘুরে যাচ্ছে, নিজে সচেতন হন এবং প্রয়োজন হলে, সেই বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে আসুন। আমার এরকম একজন বন্ধু ছিল। সে আমার থেকে হাজার গুণে বেশি গুণী, পড়াশুনায় ঢের ভালো, দেখতে প্রকৃতপক্ষে হ্যান্ডসাম। আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল কমন বন্ধুদের মাধ্যমে। ও তখন আমেরিকায় গবেষণা করত। কথা বলতে বলতে, ওর একসময় মনে হয় ও আমাকে আর বন্ধুর মত দেখতে পারছে না বরং কিছুটা আকর্ষণ বোধ করছে। এবং আমাদের দুজনেরই সেই সময়ে প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না, তাই আমরা পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই।
৩। বন্ধুত্বের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৪। আর পাঁচজন যখন বন্ধুত্ব করছে না, কিন্তু একজন করেছে, অতএব সেই মেয়েটি সস্তা, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।
৫। বন্ধুর জেন্ডার দেখার দরকার নেই। বন্ধুকে বন্ধু ভাবুন, ছেলে বন্ধু বা মেয়ে বন্ধু ভাববেন না। দেখবেন জীবন অনেক সুন্দর হবে।
শুভেচ্ছা রইল ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়ার।
Source:quora.com
0 comments:
Post a Comment