ইরানা ইসরাত: আলো ছড়ানো সেই মুখ, যার পেছনে লুকিয়ে আছে সংগ্রামের গল্প

Irana Ishrat

সকল গ্ল্যামার, আলো আর করতালির আড়ালে থাকে এমন কিছু গল্প, যেগুলো সাধারণত পর্দার সামনে আসে না। “মিস ফেস অব বিউটি বাংলাদেশ ২০২৫” বিজয়ী ইরানা ইসরাতের ঝলমলে হাসির পেছনেও রয়েছে এক অনবদ্য সংগ্রাম, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাসে গড়া জীবন।

এই ব্লগপোস্টে আমরা জানবো – কে ইরানা ইসরাত? কেমন ছিল তাঁর শৈশব, কিভাবে কাটিয়েছেন তারুণ্য? এবং কীভাবে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন আজকের এই অসাধারণ অর্জনের জন্য?

শৈশবের দিনগুলো: স্বপ্ন দেখা শুরু

ইরানা ইসরাত জন্মেছিলেন ময়মনসিংহ জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছোটবেলায় ছিলেন চুপচাপ স্বভাবের, কিন্তু মনটা ছিল বিস্ময়করভাবে কল্পনাপ্রবণ। তাঁর মা ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা, আর বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ছোট থেকেই মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় আর আত্মনিবেদন।

তখন থেকেই তিনি আয়নায় নিজের মুখ দেখে সাজতেন, পুরনো শাড়ি জড়িয়ে মডেলের মতো হাঁটতেন। এক আত্মীয়র বিয়েতে হঠাৎ করেই সবাই তার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশংসা করে – সেই থেকেই জন্ম নেয় এক স্বপ্ন: “একদিন আমি ক্যাটওয়াকে হাঁটবো, সবাই আমাকে দেখবে।”

তারুণ্যে বাঁধা-বিপত্তি ও অদম্য মানসিকতা

তবে সেই পথ ছিল না মসৃণ। কলেজ জীবনে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথাগত ধারার বাইরে গিয়ে ফ্যাশন ও মিডিয়ায় আগ্রহ দেখানোয় পরিবার ও সমাজের একাংশ থেকে নেতিবাচক মন্তব্য পেতে হয়েছে। কেউ বলেছে, “এইসব করে কী হবে?” আবার কেউ বলেছে, “ভালো মেয়েরা এসব করে না।”

তবে ইরানা থেমে থাকেননি। নিজে নিজেই ইউটিউব দেখে মেকআপ শেখেন, আয়নায় প্র্যাকটিস করেন হাঁটা, কণ্ঠের উচ্চারণ ঠিক করেন রেডিও শুনে। প্রতিদিন তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন—মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিজের ফ্যাশন কনটেন্ট তৈরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার পরিচিতি বাড়ে, অনুসরণকারী বাড়ে, আর আসে ছোটখাটো ফটোশুটের অফার

২০২৪ সালে “মিস ফেস অব বিউটি বাংলাদেশ”-এর অডিশন ঘোষণার পরই তিনি নির্ভয়ে আবেদন করেন। চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে হয়েছে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে – অডিশন, গ্রুমিং সেশন, ফ্যাশন ওয়ার্কশপ, ইন্টারভিউ রাউন্ড, এবং শেষ পর্যন্ত মূল মঞ্চ।

চূড়ান্ত রাতে তিনি যখন ক্যাটওয়াকে হেঁটেছিলেন, তার চোখেমুখে ছিল আত্মবিশ্বাস আর হৃদয়ে ছিল শত ব্যর্থতাকে জয় করার গল্প। বিচারকদের প্রশ্নে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,

“আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?”

তিনি উত্তর দিয়েছিলেন—

“মানুষের কথায় থেমে গেলে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমি শিখেছি, নিজেকে ভালোবাসতে পারলেই পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসবে।”

আজকের ইরানা: একটি অনুপ্রেরণার নাম

আজ তিনি শুধুই মিস ফেস অব বিউটি নন, বরং হাজারো তরুণীর অনুপ্রেরণা। তাঁর গল্প প্রমাণ করে যে সাফল্য শুধু সুন্দর মুখ নয়, সাফল্য মানে সাহস, ধৈর্য, এবং আত্মবিশ্বাস।

তিনি চান ভবিষ্যতে একটি নন-প্রফিট ফ্যাশন একাডেমি গড়ে তুলতে, যেখানে গ্রামের মেয়েরা ফ্যাশন, সাজসজ্জা, ক্যারিয়ার গ্রুমিং ও আত্মবিশ্বাস শেখার সুযোগ পাবে।

শেষ কথা

ইরানা ইসরাত আমাদের শেখান, “সৌন্দর্য মানে কেবল বাহ্যিক রূপ নয়, বরং তা মন, মানসিকতা আর নিজের প্রতি বিশ্বাসের এক নিখুঁত প্রকাশ।”

তার গল্প একদিন হয়তো বই হয়ে উঠবে, সিনেমার পর্দায় আসবে – কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য, আজ এই ব্লগে তার জীবনের একটি সত্যিকারের অধ্যায় লেখা হলো।

0 comments:

Post a Comment